প্রকৃতির এক বিস্ময়কর ভেষজ গাছ হলো পাথরকুচি। বাংলায় একে অনেকে “পাথরচূর্ণী” বা “অরুণপর্ণী” নামেও চেনে। ঘরোয়া ভেষজ চিকিৎসায় পাথরকুচি গাছের পাতা বিশেষ ভূমিকা রাখে। আয়ুর্বেদ ও প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্রে এই গাছকে নানা রোগের কার্যকরী প্রতিষেধক বলা হয়েছে। নিচে পাথরকুচির কিছু উল্লেখযোগ্য ভেষজ গুণ ও কোন কোন রোগে এটি মহৌষধের মতো কাজ করে তা তুলে ধরা হলো—
![]() |
যেসব রোগের মহৌষধ পাথরকুচি! |
আসুন জেনে নেই পাথরকুচি পাতার ওষুধি গুণাগুণ সম্পর্কে:
১. কিডনিতে পাথর
পাথরকুচির নামের সঙ্গেই এর অন্যতম ব্যবহার জড়িয়ে আছে। নিয়মিত পাথরকুচির রস পান করলে কিডনির পাথর আস্তে আস্তে ক্ষয় হয়ে বের হয়ে যেতে সাহায্য করে। তাই কিডনির পাথর প্রতিরোধ ও উপশমে এটি কার্যকর।
২. পাইলস ও অর্শ রোগ
তাজা পাথরকুচির পাতার রস পাইলস রোগের ব্যথা ও অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে। বিশেষত রক্তক্ষরণজনিত অর্শ রোগে এটি আরাম দেয়।
৩. জ্বর ও কাশি
প্রাচীনকালে জ্বর, সর্দি ও কাশি হলে পাথরকুচির পাতা সিদ্ধ করে খাওয়ানো হতো। এতে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
৪. লিভারের অসুখ
লিভারের প্রদাহ, হেপাটাইটিস বা জন্ডিসের মতো সমস্যায় পাথরকুচির রস উপকারী। এটি লিভারের কার্যক্ষমতা উন্নত করে।
৫. ক্ষত ও ফোঁড়া
পাথরকুচির পাতা থেঁতলে ক্ষতস্থানে লাগালে ফোঁড়া শুকিয়ে যায় ও ঘা দ্রুত সারে। এতে রয়েছে অ্যান্টিসেপ্টিক গুণ।
৬. পাকস্থলীর সমস্যা
অতিরিক্ত অম্লতা, গ্যাস্ট্রিক ও পেটব্যথায় পাথরকুচির রস খেলে আরাম পাওয়া যায়।
৭. দাঁত ও মুখগহ্বরের রোগ
পাতা চিবালে দাঁতের ব্যথা, মাড়ির প্রদাহ ও মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।
৮. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পাথরকুচির রস গ্রহণ করলে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৯. প্রস্রাবের সমস্যা
প্রস্রাবের জ্বালা, বারবার প্রস্রাব হওয়া বা কম হওয়া— এসব সমস্যায় পাথরকুচির রস উপকারী।
সতর্কতা
-
অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন করলে বমি, পেট খারাপ বা অন্যান্য সমস্যা হতে পারে।
-
যেকোনো রোগের জন্য পাথরকুচি ব্যবহারের আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
👉 সব মিলিয়ে বলা যায়, পাথরকুচি প্রকৃতির এক মহৌষধ, যা কিডনির পাথর থেকে শুরু করে পাইলস, জ্বর, ক্ষত ও লিভারের অসুখ পর্যন্ত নানান রোগে কার্যকর ভূমিকা রাখে।